জয় রায় হিমেল :: বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে সিলেটের গোলাপগঞ্জে গৌছ উদ্দিন নামের এক ব্যক্তি গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হওয়ার ঘটনায় মামলা দায়ের নিয়ে পুরো উপজেলাজুড়ে দেখা দিয়েছে চাঞ্চল্য। যদিও থানায় দায়ের করা মামলায় সাবেক শিক্ষামন্ত্রী ও সাবেক স্থানীয় সংসদ সদস্য নুরুল ইসলাম নাহিদসহ ১৩৫ জনের নামোল্লেখ করা হয়েছে। অথচ সেই মামলা দায়েরের বিষয়টি জানেন না বাদী নিজেই।
গৌছ নিহতের পর দাবি ওঠেছিল পুলিশের গুলিতেই তিনি মারা গেছেন। কিন্তু দায়েরকৃত মামলায় পুলিশের কাউকেই আসামী করা হয়নি। মামলার বাদী গৌছ উদ্দিনের ভাতিজা রেজাউল করিমসহ পরিবারের সদস্যদের দাবি এই মামলার ব্যাপারে কিছুই জানেন না তারা। কাজের কথা বলে কিছু লোক রেজাউলের আইডিকার্ডের ফটোকপি নিয়ে স্বাক্ষর জাল করে এই মামলা দায়ের করেছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি। এদিকে কে বা কারা তার আইডি কার্ডের কপি নিয়ে স্বাক্ষর জাল করেছে তা নিয়ে চলছে নানামুখি আলোচনা-সমালোচনা। বিভিন্ন মাধ্যমে মামলার বিষয়ে অবগত হওয়ার পরপরই গোলাপগঞ্জ মডেল থানায় জাল স্বাক্ষরযুক্ত মামলা আমলে না নেওয়ার জন্য লিখিত অনুরোধ জানিয়েছেন নিহত গৌছ উদ্দিনের ভাতিজা রেজাউল করিম। গেলো ২৪ আগষ্টে জমাকৃত ওই লিখিত অনুরোধপত্রে রেজাউল করিম বলেন, দায়েরকৃত এ মামলার বিষয়ে সে কিংবা তার পরিবার অবগত নয়। যদি মামলা করতেই হয় তার পরিবারের (চাচারা) সদস্যরা বিষয়টি বিবেচনা করবেন। মামলাটি আমলে না নেওয়ার অনুরোধ জানানো হয়।
জানা যায়, গত ৪ আগস্ট গোলাপগঞ্জ পৌরসদরে ছাত্র-জনতাকে লক্ষ্য করে হামলা চালায় পুলিশ ও ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীরা। এসময় গোলাপগঞ্জ পৌরসভার ঘোষগাঁওয়ের মৃত মোবারক আলীর ছেলে গৌছ উদ্দিন গুলিবিদ্ধ হন। পরে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।
হত্যাকান্ডের ঘটনায় গত শনিবার গোলাপগঞ্জ থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়। মামলার বাদী হিসেবে উল্লেখ করা হয় নিহত গৌছ উদ্দিনের ভাতিজা উত্তর ঘোষগাঁওয়ের সেলিম উদ্দিনের ছেলে রেজাউল করিমের নাম। মামলায় সিলেট-৬ আসনের (গোলাপগঞ্জ-বিয়ানীবাজার) সাবেক সংসদ সদস্য ও সাবেক শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদসহ ১৩৫ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাত আরও দুই থেকে আড়াইশ’ জনকে আসামি করা হয়। মামলায় উল্লেখ করা হয়, ঘটনার সময় আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের সন্ত্রাসীদের সাথে পুলিশ ও বিজিবি সদস্যরা গুলি করেছে। কিন্তু মামলায় পুলিশের কোন কর্মকর্তা বা সদস্যকে আসামী করা হয়নি।
এর আগে মামলার বিষয়টি জানাজানি হলে, নিহত গৌছ উদ্দিনের পরিবারের ৪সদস্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভিডিওবার্তায় মামলার বিষয়টি প্রত্যাখান করেন। ভিডিওবার্তায় কথা বলেন গৌছ উদ্দিনের ভাতিজা রেজাউল, ভাই আবুল কালাম, আরেক ভাই শামীম আহমদ ও নিহত গৌছের মা। এসময় তারা সকলেই মামলার বিষয়টি জানেন না বলেও উল্লেখ করেন।
এদিকে ওই মামলা নিয়ে সৃষ্ট ধোঁয়াশায় রীতিমতো বিরক্তি প্রকাশ করেছেন নানা রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরা। নাম প্রকাশ না করা শর্তে বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের একাধিক নেতা বলেন, যে বা যারাই এই মামলার বিষয়ে সমস্যার সৃষ্টি করছেন তারা স্ব-স্ব রাজনৈতিক দলের ভাবমূর্তি নষ্ট করছেন। সেই সাথে গোলাপগঞ্জ থানা পুলিশের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন।
এবিষয়ে জানতে গোলাপগঞ্জ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মীর মো. আব্দুন নাসেরের কোনও বক্তব্য পাওয়া যায়নি।