শিলাবৃষ্টি : ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির মুখোমুখি সিলেটবাসী!

নিজস্ব প্রতিবেদক:: সিলেটে কাল বৈশাখি ঝড় আর প্রচন্ড শিলাবৃষ্টিতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। বিভিন্নভাবে আহত হয়েছেন বেশ কয়েকজন, বাড়ি ঘরের টিনের চাল, গাড়িসহ ব্যপক ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া গেছে।

রোববার (৩১ মার্চ) রাত সাড়ে ১০টার দিকে ঝড়ো হাওয়ার সঙ্গে শুরু হয় বজ্রপাতও। কিছু সময় পর শুরু হয় বৃষ্টি। সঙ্গে পড়তে থাকে শিলাও। ১০-১৫ মিনিট স্থায়ী ছিল শিলাবৃষ্টি। আর এতেই ব্যাপক ক্ষতির মুখোমুখি হয়েছে সিলেটবাসী। এসব তথ্য নিশ্চিত কুরেছেন সিলেট আবহাওয়া অফিসের আবহাওয়াবিদ সজিব। ঝড়ে এখন পর্যন্ত চারজন আহত হয়েছেন বলে জানা গেছে। তাদের মধ্যে একজন সিলেটের ও বাকিরা সুনামগঞ্জের।

একজনকে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন হাসপাতাল পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ জনি চৌধুরী। তার নাম বিল্লাল আহমেদ (৪০)। তিনি সিলেটের গোলাপগঞ্জ উপজেলার বাসিন্দা।

অন্যদিকে ঝড়ের সময় সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতালে যাওয়ার পথে শিল্পকলা একাডেমি সড়কে একটি সিএনজিচালিত অটোরিকশায় গাছে ভেঙে পড়লে তিন যাত্রী আহত হন। তাদের মধ্যে রয়েল আহমদ ও সাদ্দাম হোসেন নামের দুইজনের পরিচয় জানা গেছে। অপরজনের পরিচয় তাৎক্ষণিকভাবে জানা যায়নি।

সুনামগঞ্জ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি, তদন্ত) ওলি উল্লাহ বলেন, ‘ঝড়ের কবলে পড়ে একটি অটোরিকশায় থাকা তিন যাত্রী আহত হয়েছেন বলে খবর পেয়েছি। আমরা খোঁজ-খবর নিচ্ছি আর কোনো হতাহত আছে কি না।’

হঠাৎ করেই কালবৈশাখী ঝড়ের সঙ্গে প্রচুর শিলাবৃষ্টি হওয়া বড় বড় শিলার আঘাতে শহরের অনেক বাসাবাড়ির জানালার ও গাড়ির কাঁচ ভেঙে গেছে। এ সময় রাস্তায় থাকা যানবাহনেরও বেশ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।

এর আগে সিলেটে এরকম শিলাবৃষ্টি দেখা যায়নি বলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মন্তব্য করছেন অনেকেই। রাস্তায় চলাচল করা বিভিন্ন গাড়ির গ্লাসও ভেঙে যায় শিলার আঘাতে। কারও কারও বাসার টিনের চালা ফুটো ও জানালার কাঁচের গ্লাস শিলাবৃষ্টিতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আহত হয়েছেন খোলা জায়গায় ও রাস্তায় অবস্থান করা কেউ কেউ।
সিলেট নগরীর বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দারা জানান, প্রচণ্ড শব্দে মনে হয়েছিল ঘরের টিন ছিদ্র হয়ে যাচ্ছে। এ রকম বড় শিলাবৃষ্টি আগে কখনো দেখেননি।
সিলেট নগরীর টিলাগড় এলাকার বাসিন্দা মুহিবুর রহমান বলেন, ‘এমন শিলাবৃষ্টি আগে কখনো দেখিনি। শিলাখণ্ডের আকার অনেক বড় ছিল। শিলাবৃষ্টিতে আমাদের বাড়ির টিনের চাল এবং সামনে থাকা একটি অটোরিকশার কাঁচের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।’
এদিকে হঠাৎ করে শিলাবৃষ্টি শুরু হওয়ায় বিপাকে পড়েন সিলেটের রাস্তায় থাকা সাধারণ মানুষ, পথচারী ও ঈদের কেনাকাটায় যাওয়া লোকজন ।
এদিকে বেশ কয়েকটি গাড়ির সামনের গ্লাস শিলাবৃষ্টিতে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।  সিলেট ও সুনামগঞ্জে এখন মাঠে মাঠে বোরো ধানসহ নানান ফসল রয়েছে। আকস্মিক কালবৈশাখী ঝড় ও শিলাবৃষ্টিতে বোরোসহ বিভিন্ন ফসলের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
আলম নামে এক কৃষক জানান, গত এক যুগেও এমন শিলাবৃষ্টি দেখেননি তিনি। মাঠে মাঠে ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। সেচসহ নানান প্রতিবন্ধকতায় বোরো মৌসুমে কৃষকরা দুশ্চিন্তায় থাকেন। এরমধ্যে শিলা বৃষ্টি কৃষকের দুশ্চিন্তা বাড়িয়ে দিয়েছে কেবল।

শিলাবৃষ্টির সঙ্গে বজ্রঝড়ের কারণে সিলেট প্রায় ছয় ঘণ্টা বিদ্যুৎবিহীন ছিল। বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষ বলছে, প্রবল ঝড় ও শিলাবৃষ্টিতে সিলেটের অনেক জায়গায় বৈদ্যুতিক লাইন ক্ষতিগ্রস্ত হবার কারণে বিভিন্ন এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রাখা হয়। পরে ভোর ৪টার দিকে বিদ্যুৎ স্বাভাবিক হলেও জেলার বিভিন্ন যায়গায় বিদ্যুৎ সরবরাহ  এখনো (সোমবার বিকাল ৪টা) বন্ধ রয়েছে। বিদ্যুত কর্তৃপক্ষ জানায় বিদ্যুত পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে সময় লাগবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *